Top Ad unit 728 × 90

Header ADS

মিষ্টি চুরির ইতিহাস এবং আরো কিছু কথা




জি, অনেক মিষ্টি চুরি করে খেয়েছি !  এমনকি ছোটবেলায় কত চিনি চুপিচুপি খেয়ে শেষ করেছি সে হিসেব দিতে পারব না। ধরা খেয়ে বকাও খেয়েছি। তাতেও কাজ হয়নি। আমার কাজ আমি চালিয়ে গেছি দিনের পর দিন। এমনকি বহু বছর পর যখন বড় হয়ে গেলাম। ছেলেবেলা হারিয়ে গেল কালের গর্ভে।কত সৃতি কত অভ্যাস কত মানুষ হারিয়ে গেল। তবু মিষ্টি প্রীতি হারালো না। রয়ে গেল আমার সাথে।আমিও ছাড়তে পারছিলাম না। কত কালের সম্পর্ক ! কেমনে ছাড়ি ?

ছয় বছর ছিলাম একটা বায়িং হাউসে। ওখানে প্রায়ই নাস্তার সাথে মিষ্টি থাকতো। আহা: মিষ্টি ! সাধারণত বিকেলের নাস্তার সাথে মিষ্টি থাকতো। নাস্তার সময় সবার ডেস্কে নাস্তার প্লেট রেখে যেতো। আমি তক্কে তক্কে থাকতাম। যেই ডেস্কে লোক থাকতো না, হয়ত অন্য ফ্লোরে গেছে কাজে। না হয় সারের রুমে। এই তো সুযোগ ! নিজের টা তো খেতাম ই। এই খালি টেবিলের মিষ্টি ও খেয়ে ফেলতাম। তবে দু এক জন বেরসিকের মিষ্টিতে হাত দিতাম না। সত্যি বলতে বেশিরভাগ মানুষই আমাকে পছন্দ করত। আর আমার এই মিষ্টি চুরিটাকেও উপভোগ করত। কখনো আমি কাজের চাপে চুরিতে আসতে না পারলে , কেউ কেউ আমাকে ফোন করে এনেও তাদের মিষ্টি দিয়ে দিত।

ওই অফিস ছাড়ার পর আরো ছয় বছর কেটে গেল। একটা সলুশন প্রভাইড করার জন্য আবার গেলাম।সবার ব্যবহার সত্যিই আন্তরিক ছিল। তো আমি কাজের ফাকে পুরো অফিস ঘুরে দেখছিলাম। প্রথমেই গেলাম ডাইনিং রুমে। তিন জন লাঞ্চ করছেন। দুই জন হাজবেন্ড ওয়াইফ। আর একজন ফিমেল।দেখতে অনেকটা পরিচিত এক আপুর(মুন আপু) মতো লাগছিল। আবার কেমন যেন খটকা লাগছিল।ভাবলাম অনেক দিনের ব্যাপার। হয়ত আমার সৃতি দুর্বল হয়ে গেছে। কে জানে ! এত কিছু ভাবতে ভাবতেই ওনার দিকে তাকিয়ে পরিচিত ভঙ্গিতে দাঁত কেলিয়ে দিলাম ! রেসপন্স টা সেরকম আসল না।বেশ গোলমেলে। ধুর হচ্ছেটা কি ? ভাবলাম..

যা হোক যা হবার হইছে। যে ফ্লোরে আমার লোকজন কাজ করছে সে ফ্লোরে গেলাম। একটু পরে যখন মুন আপু এসে হাসতে হাসতে আমারে দুইটা খোচা দিয়া বললেন "তুই মানুষের সাথে উল্টা পাল্টা কি করিস ?" তখন বুঝলাম গোলমাল টা কোথায় ছিল। ডাইনিং টেবিলের ওই জন ছিল মুন আপুর ছোট বোন :P এই অফিসে নতুন জয়েন করেছে। যেটা আমি জানতাম না। আমি অনেক বছর আগে একে একবার দেখেছিলাম। সে কম করে হলেও আট নয় বছর আগের কথা। এত দিন পরে আমি না চিনলেও সে আমাকে চিনতে পারছে। লাঞ্চ শেষ করে আপুর কাছে গিয়ে বলেছে হাসান ভাই আমাকে তুমি মনে করছে। কিয়েক্টাবস্তা !

যা হোক এ নিয়ে কিছুক্ষন মজা চললো।

এদিকে একাউন্টস এর রফিক ভাই বললেন অবশ্যই নাস্তা খেয়ে যাবেন। আজকে নাস্তায় মিষ্টি আনতে বলেছি। কত দিন পর আবার মিষ্টি। এ কথা কি আর না রেখে পারা যায়? যা হোক কাজ শেষ হতে হতে সন্ধা প্রায়। ভাবলাম মাগরিবের নামাজ টা এখান থেকেই আদায় করে যাই। এর মধ্যে নাস্তা দিলে তো দিলোই। নাস্তা আসলো কিন্তু মিষ্টি আসল না। কত বড় কষ্টের কথা ! যাকে নাস্তা আনতে পাঠিয়েছিল সে মিষ্টির কথা ভুলে গেছে। আর আমাকেও তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। 

নাস্তা খেয়ে বের হব এমন সময় রফিক ভাই বললেন। আপনার কাজ আছে , আপনি একটু বসেন।আপনি যে কাজ করে দিয়ে গেলেন, কি কাজ করলেন আমিই তো জানি না। আমাকে না দেখিয়ে গেলে আপনার বিলে সমস্যা হয়ে যাবে। আমি ভাবলাম যা: বাবা ! মিষ্টি খাওয়াবে বলে খাওয়ালো না, আবার দিন শেষে এমন তিতা কথা ! 

যা আছে কপালে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই। আমাকে বসিয়ে রেখে উনি ব্যাস্ত হাতে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। কি বিরক্তিকর!

বসে বসে ভাবছি হচ্ছেটা কি ? বেশিক্ষণ ভাবতে হলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনা পরিস্কার হয়ে গেল।যখন অফিসের বয় আমার সামনে মিষ্টির প্লেট টা রাখল।

আসলে উনি আমাকে বসানোর জন্য ওই কথা বলেছেন। আর এই ফাঁকে একজনকে পাঠিয়ে দুই রকমের মিষ্টি আনিয়েছেন।

মিষ্টি চুরির ইতিহাস এবং আরো কিছু কথা Reviewed by Hasanur Rahman on ফেব্রুয়ারী ০২, ২০২১ Rating: 5

২টি মন্তব্য:

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.